অর্থ অনর্থের মূল: জ্যোতিষশাস্ত্রে ধনভাব ও দাম্পত্যের মারক সত্য
![]() |
| My Astrology Ranaghat |
অর্থ, অনর্থ ও মানবজীবনের দ্বন্দ্ব
লেখক: জ্যোতিষী ও হস্তরেখা বিশেষজ্ঞ প্রদ্যুত আচার্য
শাস্ত্রকারগণ সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন—“অর্থ অনর্থের মূল।”
এই একটি বাক্য যেন সমগ্র মানবসভ্যতার ইতিহাসকে কষাঘাত করে। সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি মানুষ প্রতিনিয়ত অর্থের জন্য সংগ্রাম করেছে। অর্থ মানুষকে দিয়েছে প্রাচুর্য, উন্নতি, ক্ষমতা, আবার একই অর্থ মানুষকে করেছে দুঃখী, স্বার্থপর, নির্মম ও নিষ্ঠুর। অর্থের দ্বৈত চরিত্র—এই দ্বন্দ্বই শাস্ত্রকারদের চোখে ধরা পড়েছিল বহু সহস্র বছর আগে।
জ্যোতিষশাস্ত্রে বলা হয়েছে—রাশিচক্রের দ্বিতীয় ভাব, অর্থাৎ ধনভাব, যেখান থেকে মানুষের স্থাবর-অস্থাবর সমস্ত সম্পদের বিচার হয়, সেই ঘরটিকেই মহর্ষি পরাশর মারকস্থান বলেছেন। শুধু তাই নয়, রাশিচক্রের সপ্তম ভাব—যেখান থেকে মানুষের বিবাহ, দাম্পত্য জীবন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও যৌন সম্পর্ক বিচার করা হয়—সেই ঘরকেও তিনি মারক বলে ঘোষণা করেছেন।
📖 প্রমাণ (সূত্র): বৃহৎ পরাশর হোরাশাস্ত্র – মারকাধ্যায়
এই ঘোষণাটি নিছক কোনো গূঢ় জ্যোতিষীয় নিয়ম নয়। এর অন্তরে আছে এক গভীর জীবনদর্শন। অর্থ এবং দাম্পত্য—দুটিই মানবজীবনের অপরিহার্য অঙ্গ। অথচ ইতিহাস সাক্ষী—অর্থের জন্য অসংখ্য যুদ্ধ হয়েছে, রাজ্য ধ্বংস হয়েছে; আবার দাম্পত্যের টানাপোড়েন অসংখ্য পরিবারকে ছিন্নভিন্ন করেছে।
অর্থ – আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?
মানুষ জন্ম থেকেই নির্ভরশীল। বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয় চাই। এগুলোই ক্রমশ অর্থের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। ফলে অর্থ ছাড়া জীবন চালানো প্রায় অসম্ভব।
অর্থ যখন প্রয়োজনের সীমার মধ্যে থাকে, তখন তা আশীর্বাদ।
অর্থ যখন আসক্তির রূপ নেয়, তখন তা অভিশাপ।
আজকের পৃথিবীতে মানুষের মান, যশ, প্রতিষ্ঠা, এমনকি যোগ্যতাও অর্থ দিয়ে মাপা হয়। “যার হাতে টাকা, তার কদর”—এই কথাই সমাজের অঘোষিত নিয়ম। ফলে মানুষ ভাবে—অর্থ থাকলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু সত্য উল্টো।
উদাহরণস্বরূপ—
একজন মানুষ কোটি টাকার মালিক, কিন্তু রাতে একা খেতে বসে। চারপাশে চাকর-বাকর থাকলেও হৃদয়ের কাছে বসার মতো একজন মানুষ নেই। আবার এক গরিব কৃষক, যিনি সারাদিন মাঠে কাজ করেন, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে স্ত্রীর সাথে বসে গরম ভাত খেয়ে, সন্তানের হাসি শুনে এক অন্যরকম শান্তি পান। শাস্ত্রকারেরা এই বৈপরীত্যই ধরেছিলেন।
অর্থ হলো ছায়ার মতো—আপনি যখন পেছনে ছুটবেন, তখন সেটা দূরে পালাবে; কিন্তু আপনি যখন নিজের পথে এগোবেন, অর্থ নিজে থেকেই আসবে।
দ্বিতীয় ভাব – ধনভাবের অন্তর্নিহিত বিপদ
জ্যোতিষশাস্ত্রে দ্বিতীয় ভাব কেবল অর্থ নয়, আরও বহু বিষয়ের বিচার করে—
পরিবার ও রক্তসম্পর্ক
কণ্ঠস্বর ও ভাষা
খাদ্যাভ্যাস
বাকশক্তি ও বাগ্মিতা
কিন্তু অর্থই এর প্রধান সূচক। অর্থের সাথে মানুষের আত্মপরিচয়ের একটি অদৃশ্য যোগ রয়েছে। আমরা প্রায়শই বলি—“ওই লোকটা অনেক বড়লোক।” কিন্তু আসলে আমরা কী বলছি? আমরা তার চরিত্র নয়, তার ব্যাংক ব্যালেন্সকে বড় বলছি। এটাই দ্বিতীয় ভাবের বিপদ—অর্থ মানুষকে নিজের চোখেই অন্ধ করে দেয়।
দ্বিতীয় ভাবকে কেন মারক বলা হলো?
কারণ অর্থের পিছনে অন্ধ দৌড় প্রায়ই জীবনের মৌলিক সত্য ভুলিয়ে দেয়। অর্থ মানুষকে অহংকারী করে তোলে। সম্পদের লালসায় মানুষ পরিবারকেও বিসর্জন দিতে দ্বিধা করে না। তাই দ্বিতীয় ভাব কেবল ধনভাব নয়, একইসঙ্গে মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
সপ্তম ভাব – দাম্পত্যের দ্বন্দ্ব
সপ্তম ভাব মানুষের জীবনের আরেকটি বড় স্তম্ভ—দাম্পত্য। এই ভাব থেকেই বিচার হয়—
বিবাহ
যৌন সম্পর্ক
দাম্পত্য সুখ
ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব
সপ্তম ভাবকে মারক বলা হয়েছে, কারণ দাম্পত্য সুখের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে দাম্পত্য ভাঙন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অবিশ্বাস, সময় না দেওয়া, দূরত্ব কিংবা তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ—এসবই জীবনকে বিপর্যস্ত করে।
দাম্পত্যের টানাপোড়েন শুধু একটি পরিবারকেই নয়, প্রজন্মকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। সন্তানরা ভাঙা সংসারে বড় হয়, তাদের মানসিক বিকাশ থেমে যায়। তাই সপ্তম ভাব মানুষের জন্য আশীর্বাদও বটে, আবার অনর্থের মূলও।
অর্থ বনাম দাম্পত্য – জীবনের দ্বিমুখী স্রোত
মানুষ জীবনে দুটি বড় লক্ষ্য নিয়ে ছুটে চলে—
অর্থ উপার্জন
দাম্পত্য সুখ অর্জন
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ দুটি প্রায়শই একে অপরের পরিপন্থী হয়ে ওঠে।
কেউ যদি অর্থ উপার্জনের জন্য অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে, তবে পরিবারের জন্য সময় থাকে না। ফলে দাম্পত্য জীবনে দূরত্ব আসে।
আবার কেউ যদি দাম্পত্য জীবনে ডুবে যায়, তবে কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে পারে।
এই দ্বন্দ্বই মানুষের জীবনের প্রকৃত যুদ্ধক্ষেত্র। শাস্ত্রকারেরা তাই দ্বিতীয় ও সপ্তম ভাবকে একসঙ্গে মারক বলেছেন—কারণ অর্থ ও দাম্পত্য, এই দুইয়ের সংঘাতেই অধিকাংশ মানুষের পতন ঘটে।
দার্শনিক দৃষ্টিতে অর্থ
গীতা বলছে—
“কর্ম করো, ফলে আসক্ত হয়ো না।”
এখানে “ফল” মানে অর্থ বা প্রতিদান। অর্থের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তিই মানুষের শৃঙ্খল।
পাশ্চাত্যের দার্শনিক কান্ট বলেছিলেন—মানুষকে কখনোই “মাধ্যম” হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়, তাকে সর্বদা “উদ্দেশ্য” হিসেবে দেখতে হবে। অথচ অর্থলোভে মানুষ মানুষকেই মাধ্যম বানায়। সম্পর্ক হয়ে যায় ব্যবসার হাতিয়ার।
বুদ্ধ বলেছেন—“তৃষ্ণাই দুঃখের মূল।”
অর্থলোভ সেই তৃষ্ণাকেই বাড়িয়ে তোলে। ফলত মানুষ সুখের সন্ধানে গিয়ে আরও অশান্তির ফাঁদে জড়িয়ে পড়ে।
বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে
আমার দীর্ঘ জ্যোতিষ জীবনে দেখেছি—
অসংখ্য মানুষ কর্মসূত্রে বিদেশে থাকেন, অর্থ প্রচুর উপার্জন করেন, কিন্তু পরিবার ভেঙে যায়।
আবার বহু ব্যবসায়ী জীবনের সর্বস্ব দিয়ে ব্যবসা বড় করেছেন, কিন্তু এক ভুল পার্টনারশিপের কারণে সব হারিয়েছেন।
ধনী মানুষেরা অনেক সময় চরম একাকিত্বে ভোগেন, অথচ গরিব মানুষের জীবনে পারিবারিক উষ্ণতা থাকে।
এই বাস্তবতাই প্রমাণ করে—শাস্ত্র যে অর্থ ও দাম্পত্যকে মারক বলেছে, তা নিছক আধ্যাত্মিক ধারণা নয়, বরং এক নির্মম সামাজিক সত্য।
অর্থের অন্বেষণ বনাম জীবনের অর্থ
এখানে একটি গভীর প্রশ্ন আসে—
👉 মানুষ কি অর্থের জন্য বাঁচে, নাকি অর্থ মানুষের বাঁচার জন্য?
আজকের বিশ্বে মনে হয় মানুষ অর্থের দাস হয়ে গেছে। অথচ প্রকৃত দার্শনিকতা হলো—অর্থ মানুষের জন্য, মানুষ অর্থের জন্য নয়।
যখন অর্থ লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়, তখন মানবিকতা বিলুপ্ত হয়। মানুষ এক যান্ত্রিক সত্তায় পরিণত হয়। আবার যখন অর্থকে প্রয়োজনের সীমায় রাখা হয়, তখনই মানুষ সত্যিকারের স্বাধীন হয়।
অতএব বোঝা যায়—
অর্থ জীবনের চালিকা শক্তি, আবার ধ্বংসেরও কারণ।
দাম্পত্য সুখ মানুষকে পূর্ণতা দেয়, আবার দাম্পত্য ভাঙন জীবনকে ছিন্নভিন্ন করে।
তাই মহর্ষি পরাশর দ্বিতীয় ও সপ্তম ভাবকে মারক বলেছেন।
এখানে কোনো অলৌকিকতা নেই, আছে বাস্তব দার্শনিক সত্য। অর্থ ও দাম্পত্য—এই দুই দিককে সামঞ্জস্যপূর্ণ না রাখলে, জীবনে সুখ আসে না।
১. ধনভাব ও দাম্পত্যভাব—মারকের দর্শন
ঋষি পরাশর যখন বৃহৎ পরাশর হোরাশাস্ত্রে ঘোষণা করলেন—
📖 “দ্বিতীয় সপ্তমে যো: স্থানং মারক স্থানমুদাহৃতম্।”
(অর্থাৎ, জন্মকুণ্ডলীর দ্বিতীয় ও সপ্তম ভাবকে মারকস্থান বলা হয়েছে।)
তখন তিনি শুধুমাত্র মৃত্যুর জ্যোতিষীয় সূত্র দেননি, বরং গভীর জীবনদর্শনও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
দ্বিতীয় ভাব—অর্থাৎ ধন, খাদ্য, বাকশক্তি ও পরিবার।
সপ্তম ভাব—অর্থাৎ বিবাহ, দাম্পত্য, যৌনতা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবনের পারস্পরিক সম্পর্ক।
ঋষি বলছেন, এই দুই ভাবই মারক। কেন? কারণ অর্থ ও দাম্পত্য মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড়ো পরীক্ষার ক্ষেত্র।
অর্থ থাকলে অহংকার জন্মায়, দাম্পত্য থাকলে আসক্তি জন্মায়। এই দুই আসক্তিই জীবনের মূল সংকট।
২. অর্থ—অহংকারের জন্মভূমি
অর্থ যখন সীমার মধ্যে থাকে, তখন তা জীবনের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা—এই সব প্রয়োজন পূরণ করে।
কিন্তু যখন অর্থ সীমার বাইরে গিয়ে মাথায় ওঠে, তখন তা জন্ম দেয়—
অহংকার—“আমি অর্থবান, তাই আমি শ্রেষ্ঠ।”
বিচ্ছিন্নতা—অর্থ আপনাকে মানুষের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
অতৃপ্তি—অর্থ যত বাড়ে, তৃষ্ণা তত বাড়ে।
গীতা বলছে—
📖 “অশান্তস্য কুতঃ সুখম্?”
(যার অন্তরে শান্তি নেই, সে সুখ কোথায় পাবে?)
অর্থ মানুষকে শান্তি দিতে পারে না। অর্থ কেবল প্রয়োজন মেটায়, কিন্তু চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে মানুষ নিজের মানবিকতা ভুলে যায়।
৩. দাম্পত্য—আসক্তির জন্মভূমি
সপ্তম ভাব দাম্পত্যের প্রতীক।
বিবাহ মানে কেবল সামাজিক বন্ধন নয়, এটি আত্মার গভীর সম্পর্ক।
কিন্তু, যখন দাম্পত্যে সময় দেওয়া হয় না, অথবা একে অপরকে অবহেলা করা হয় অর্থলোভের কারণে, তখন সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়।
আমার দীর্ঘ ১৫+ বছরের জ্যোতিষ-অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি—
যাদের কর্মসূত্রে দীর্ঘ সময় দূরে থাকতে হয়, তাদের জীবনে পরকীয়া ও অবিশ্বাস সহজেই প্রবেশ করে।
যাদের জীবনে অর্থ আছে, কিন্তু দাম্পত্যে সময় নেই, তারা সর্বদা মানসিক অশান্তিতে ভোগে।
অর্থ যতই থাকুক না কেন, একজন সঙ্গীর বিশ্বাসঘাতকতা মানুষকে ভিতরে ভিতরে ভেঙে দেয়।
এ কারণেই পরাশর সপ্তম ভাবকে মারক বলেছেন।
কারণ, দাম্পত্য ভাঙন মানেই জীবনের সবচেয়ে বড়ো মানসিক মৃত্যু।
৪. ভারতীয় দর্শনে অর্থের স্থান
ভারতীয় দর্শনে পুরুষার্থ চার ভাগে বিভক্ত—
১. ধর্ম
২. অর্থ
৩. কাম
৪. মোক্ষ
অর্থ এখানে অপরিহার্য, কিন্তু সর্বস্ব নয়।
অর্থ যদি ধর্মের অধীন থাকে, তবে তা কল্যাণ আনে।
অর্থ যদি কামকে তাড়িত করে, তবে তা ধ্বংস ডেকে আনে।
মনুস্মৃতি বলছে—
📖 “ধর্মার্থৌ যত্র নৈব স্যাৎ, কামস্তত্র ন সিধ্যতি।”
(যেখানে ধর্ম ও অর্থ নেই, সেখানে কামও সফল হয় না।)
অর্থাৎ, অর্থহীন জীবন অসম্পূর্ণ, আবার অর্থ যখন ধর্মহীন হয় তখন কাম—অর্থাৎ দাম্পত্য, সুখ, আনন্দ—সফল হয় না।
৫. পাশ্চাত্য দর্শনে অর্থের বিশ্লেষণ
পাশ্চাত্য দার্শনিকরাও অর্থের সীমাবদ্ধতা নিয়ে বহু কথা বলেছেন।
অ্যারিস্টটল বলেছিলেন—অর্থ কেবল বিনিময়ের মাধ্যম, জীবনের উদ্দেশ্য নয়।
কার্ল মার্কস বললেন—অর্থ মানুষের শ্রমকে পণ্য বানায়, আর মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে।
ফ্রয়েড বিশ্লেষণ করলেন—অর্থ ও যৌনতা মানুষের অবচেতন মনকে প্রভাবিত করে।
সব দর্শনের সারকথা—অর্থ প্রয়োজনীয়, কিন্তু অর্থই চূড়ান্ত নয়।
৬. বাস্তব জীবন থেকে উদাহরণ
আমরা প্রায়ই দেখি—
ধনী ব্যবসায়ীর অঢেল সম্পদ আছে, কিন্তু সন্তান তার কাছাকাছি আসতে চায় না।
কর্মজীবী স্বামী-স্ত্রী অর্থের পিছনে ছুটতে ছুটতে এমন জীবন যাপন করেন, যেখানে সন্তান বড়ো হয় একা, আর দাম্পত্য ফাঁকা হয়ে যায়।
অনেক দম্পতি কেবল অর্থলোভের কারণে একে অপরকে হারিয়ে ফেলে, অথচ সমাজে তারা ‘সফল’।
এই সফলতা আসলে অন্ধকার—যেখানে মানুষ বেঁচে থেকেও মৃত।
৭. অর্থ ও মৃত্যুর সম্পর্ক
জ্যোতিষশাস্ত্রের মারকভাব কেবল দাম্পত্য ভাঙনের মৃত্যু নয়, শারীরিক মৃত্যুর সাথেও যুক্ত।
দ্বিতীয় ভাব—খাদ্য, যা জীবন দেয়। খাদ্যই যদি অতিরিক্ত হয়, তা মৃত্যু ডেকে আনে।
সপ্তম ভাব—যৌনতা, যা জীবন রক্ষা করে। কিন্তু অতিরিক্ত ভোগই রোগ ও মৃত্যু ডেকে আনে।
এ কারণেই পরাশর বললেন—এই দুই ভাব মারক।
কারণ, মানুষের মৃত্যু প্রায়শই অতিরিক্ত অর্থলোভ ও অতিরিক্ত ভোগলোভ থেকেই আসে।
৮. আধুনিক সমাজে অর্থের ভয়াবহতা
আজকের সমাজে অর্থই যেন দেবতা।
সবাই অর্থ চায়, কিন্তু কেউ ভাবে না অর্থের জন্য কতটা মূল্য দিতে হচ্ছে।
মানসিক রোগ—অর্থলোভ থেকে জন্ম নিচ্ছে।
পরিবার ভাঙন—অর্থের কারণে।
অপরাধ—অর্থের জন্য।
মানবিকতা হারানো—অর্থের চাপে।
গীতা আবার সতর্ক করছে—
📖 “কামেষ ক্রোধেষ রজোগুণসমুদ্ভবাঃ।”
(কামনা ও ক্রোধ রজোগুণ থেকে জন্ম নেয়। অর্থই সেই কামনার মূল।)
৯. আত্মার মুক্তি ও অর্থের সীমা
অর্থ যখন জীবনকে দখল করে, তখন আত্মা তার মুক্তি খুঁজে পায় না।
অর্থ মানুষকে দেহের সাথে বেঁধে রাখে।
কিন্তু আত্মা মুক্তি চায়—মোক্ষ।
তাই ঋষি-মুনি সবসময় বলেছেন—
অর্থ থাক, কিন্তু অর্থের দ্বারা বাঁচো না।
অর্থ উপার্জন করো, কিন্তু অর্থের দাস হয়ো না।
অর্থকে ব্যবহার করো, কিন্তু অর্থকে পূজা করো না।
১০. উপসংহার
অর্থ ও দাম্পত্য—এই দুই মানুষের জীবনের অপরিহার্য সত্য।
কিন্তু এই দুই-ই মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে, যদি তা সীমার বাইরে যায়।
ঋষি পরাশর তাই ঘোষণা করেছিলেন—দ্বিতীয় ও সপ্তম ভাবই মারক।
আমরা যদি জীবনের সমতা বজায় রাখতে পারি, তবে অর্থ আশীর্বাদ, দাম্পত্য আশ্রয়।
কিন্তু যদি সমতা হারাই, তবে অর্থ অভিশাপ, দাম্পত্য বিষ।
এ কারণেই শাস্ত্র সতর্ক করে—অর্থ অনর্থের মূল।
🪔 পেশাগত পরামর্শ
আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায়, হাজারো মানুষের হাতের রেখা ও জন্মকুণ্ডলী বিচার করে আমি দেখেছি—
অর্থলোভ ও দাম্পত্য-অবহেলার কারণে অশান্তি, বিবাহবিচ্ছেদ, মানসিক রোগ, এমনকি অকাল মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে।
সঠিক সময়ের সঠিক জ্যোতিষ পরামর্শে এই অশান্তি রোধ করা যায়।
👉 MyAstrology Ranaghat Nadia Astrology and Palmistry Consultant Service
👉 Astrologer and Palmist Dr. Prodyut Acharya
All India ভিত্তিক অনলাইন ও অফলাইন জ্যোতিষ ও হস্তরেখা পরামর্শ এখনই উপলব্ধ।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন